প্রকাশিত : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ২৩:২১
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন

বগুড়ায় হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের দাবি করে মিথ্যা প্রচারণা

চাঁদনী ডিজিটাল ডেস্কঃ
বগুড়ায় হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের দাবি করে মিথ্যা প্রচারণা
ছবি: রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে বগুড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এই ভিডিওটি ভারতীয় এক্স (সাবেক টুইটার) এবং ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ভিডিওটি হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কোনো ঘটনার নয়। বরং এটি বগুড়ার সদর উপজেলার সাবগ্রাম ইউনিয়নের ক্ষিদ্রধামা গ্রামে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনে মুসলিম পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার ভিডিও।

ঘটনার বিবরণ

উল্লেখিত ভিডিওটি প্রথমে ‘Md Rasel Mahmud’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ৭ ডিসেম্বর প্রচার করা হয়। ভিডিওটির সাথে দাবি করা হয়েছিল, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। একই বিষয়ে ‘Hakim Press Bogrua’ নামের আরেকটি অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টে জানানো হয়, সাবগ্রাম ইউনিয়নের ক্ষিদ্রধামা মধ্যপাড়ায় বিকেল ৫টার দিকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যেখানে ৫ থেকে ৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।

দৈনিক করতোয়ার একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বগুড়া সদর উপজেলার ক্ষিদ্রধামা মধ্যপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭টি পরিবারের সবকিছু পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ লাইনের স্পার্ক থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়।

স্থানীয়দের বক্তব্য

রিউমর স্ক্যানার টিম স্থানীয় সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে যে, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সবাই মুসলিম।

স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল বলেন, "ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সবাই মুসলিম এবং আগুন বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে লেগেছে বলে ধারণা করা হয়।"

সাবগ্রাম ইউনিয়নের মেম্বার আশিকুর রহমান বলেন, "৫টি মুসলিম পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন প্রথমে সোহেলের বাড়িতে লেগেছিল এবং পরে তা ছড়িয়ে পড়ে।"

ক্ষতিগ্রস্ত আমিনুল ইসলাম সোহেল বলেন, "আমার ঘরের চালায় থাকা বিদ্যুতের খুঁটি থেকে শর্টসার্কিট হয়ে আগুন লাগে।"

বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রচার

এই ঘটনা মুসলিম পরিবারগুলোর বাড়িতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড হলেও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ বলে প্রচার করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সত্যতা

বগুড়ায় গত ৭ ডিসেম্বরের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মুসলিম পরিবার এবং অগ্নিকাণ্ডের কারণ ছিল বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি।

সতর্কতা: বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে সামাজিক বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে। তাই যাচাই ছাড়া এ ধরনের তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।

Rumor Scanner’s এ উল্লেখিত তথ্যসূত্র ছিল: ১। স্থানীয় সাংবাদিকদের বক্তব্য, ২। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, ৩। ফেসবুক পোস্ট: Md Rasel Mahmud, Hakim Press Bogrua, ৪। দৈনিক করতোয়ার প্রতিবেদন, ৫। রিউমর স্ক্যানার টিমের নিজস্ব অনুসন্ধান

সংবাদ প্রতিবেদনের সূত্র: https://rumorscanner.com/fact-check/a-muslim-house-in-bogura-was-spread-with-the-claiming-hindu-house-being-set-on-fire/132174

 

উপরে