প্রকাশিত : ৫ জুন, ২০২৫ ০১:২৩

বগুড়ার শেরপুরে ঈদ সামনে রেখে দুধ ও দইয়ের দাম বাড়তি, ভোগান্তিতে ক্রেতারা

এনামুল হক, শেরপুর, বগুড়াঃ
বগুড়ার শেরপুরে ঈদ সামনে রেখে দুধ ও দইয়ের দাম বাড়তি, ভোগান্তিতে ক্রেতারা

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দুধ ও দইয়ের দাম। ঈদকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ঐতিহ্যবাহী দইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরবরাহে চাপ তৈরি হয়েছে। এতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত দুধের দামও বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ফলে সাধারণ ক্রেতারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

হঠাৎ দ্বিগুণ দামে দুধ, চাহিদা বেশি — সরবরাহ কম

গত এক সপ্তাহে দুধের দাম লিটারপ্রতি ৪০–৫০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০–১০৫ টাকায়। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে এমন মূল্যবৃদ্ধিতে হতবাক সাধারণ ভোক্তারা।
স্থানীয় এক দুধ ব্যবসায়ী বলেন, “প্রতি বছর কোরবানির ঈদের সময় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বগুড়ার দইয়ের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। সেই অনুযায়ী দই উৎপাদনের জন্য দুধের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। কিন্তু দুধের উৎপাদন সে তুলনায় বাড়ে না, ফলে আমাদের দাম বাড়াতে হয়।”

দইয়ের বাজারেও মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব

দুধের দামে এই ঊর্ধ্বগতির সরাসরি প্রভাব পড়েছে দইয়ের বাজারে।
শেরপুর শহরের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় দইয়ের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে:

শাহী দই (১ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ২৮০ টাকা

স্পেশাল দই বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়

রেগুলার দই ২২০ টাকায়

সাধারণ মানের দই বিক্রি হচ্ছে ১৭০–১৮০ টাকার মধ্যে

এক দই প্রস্তুতকারী জানান, “আমাদের শুধু দুধ কিনলেই হয় না—শ্রমিকের মজুরি, জ্বালানি খড়ি, মাটির হাঁড়ি, চিনিসহ অন্যান্য উপকরণের দামও বেড়েছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।”

ঐতিহ্যবাহী দই, চাহিদা দেশজুড়ে

প্রায় আড়াইশ বছর আগে শেরপুরেই দই উৎপাদনের যাত্রা শুরু হয়। স্থানীয় ঘোষ পরিবারের সদস্য ঘেটু ঘোষ প্রথম টক দই তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে চিনিপাতা মিষ্টি দইয়ে রূপ নেয়।
আজ সেই ঐতিহ্যবাহী দই সারা দেশে পরিচিত, এমনকি প্রবাসেও বাঙালি কমিউনিটিতে বগুড়ার দইয়ের কদর রয়েছে। বগুড়ার দই ইতোমধ্যেই ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

এক দই ব্যবসায়ী বলেন, “ঈদের মৌসুমে আমাদের কাছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ডার আসে। প্রতিদিন ২০০–৩০০ কেজি পর্যন্ত দই প্রস্তুত করতে হয়। কিন্তু কাঁচামাল ও অন্যান্য খরচ না বাড়িয়ে দাম ধরে রাখা সম্ভব হয় না।”

দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ভোক্তারা

দই কিনতে আসা এক গ্রাহক জানান, “প্রতি ঈদেই আত্মীয়-স্বজনদের জন্য বগুড়ার দই কিনে পাঠাই। এবার দেখি দাম অনেক বেশি। একসঙ্গে ৫–৬ কেজি নিতে গেলে বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে।”

আরেকজন বলেন, “বগুড়ার দই একসময় গরিব-ধনী সবার নাগালে ছিল। এখন শুধু ধনীরাই খেতে পারবে মনে হচ্ছে।”

প্রশাসনের নজর প্রয়োজন

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদ সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে করে ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার দই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রশাসনের মনিটরিং ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ না থাকলে সামনের দিনে এ সংকট আরও বাড়বে।

উপরে