হারিয়ে যেতে বসেছে ৪৬৮ বছরের কেল্লাপোশী মেলার ঐতিহ্য

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে ৪৬৮ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোশী মেলা। গত রোববার (২৫ মে) থেকে শুরু হওয়া এ মেলা এবার ৪৬৯ বছরে পদার্পণ করল। স্থানীয়ভাবে এটি 'মাদারের মেলা' বা 'জামাইবরণ মেলা' নামেও পরিচিত।
প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় সোমবার শুরু হওয়া এ মেলা একসময় ছিল পারিবারিক মিলনমেলার কেন্দ্রবিন্দু। জামাইদের শ্বশুরবাড়ি থেকে আমন্ত্রণ, সেলামি প্রদান, মেলা থেকে বড় মাছ ও মিষ্টি কিনে বাড়ি ফেরা ছিল মেলার অবিচ্ছেদ্য অংশ। শ্যালক-শ্যালিকাদের সঙ্গে মেলায় ঘোরা, সার্কাস, বিচিত্রা, নাগোরদোলা, পুতুল নাচ উপভোগ করা ছিল এক ঐতিহ্য।
তবে, সময়ের পরিবর্তনে প্রযুক্তি ও জীবনধারার আধুনিকতার ছোঁয়ায় সে ঐতিহ্য আজ অনেকটাই ম্লান। মেলার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে, বেড়েছে জুয়া ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড। প্রবীণ দর্শনার্থী রফিক মিয়া বলেন, "আগে মেলায় যে আনন্দ ছিল, এখন তা আর নেই। এখন পরিবার নিয়ে আসতে ভয় হয়—জুয়া, নোংরামি বেড়েছে।"
তবুও, এখনো মেলায় বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজন যেমন সার্কাস, পুতুল নাচ, মোটরসাইকেল খেলা, শিশুদের জাম্পিং, কার খেলা, নৌকা ইত্যাদি থাকে। দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা দিন-রাত জমজমাটভাবে বেচাকেনায় অংশ নেন।
মেলার ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৫৫৬ সালে বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের পুত্র গাজী মিয়া ও রাজকন্যা চম্পাবতীর বিবাহ উপলক্ষে এই মেলার সূচনা হয়েছিল। তিন দিনব্যাপী সে উৎসব থেকে জন্ম নেয় কেল্লাপোশী মেলা।
শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন জানান, মেলায় কোনো ধরনের অশ্লীল যাত্রা, জুয়া বা অনৈতিক কার্যক্রম সহ্য করা হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।