প্রকাশিত : ২ জুন, ২০২৫ ০০:১৭

ক্ষেতলালে ভিজিএফ চাল বিতরণে ওজনে ঘাটতি, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ

খাদ্য গুদাম থেকে ৫০ কেজির বস্তায় রয়েছে মাত্র ৪০-৪২ কেজি, প্রকাশ্যে ঘুষের প্রস্তাব
উপজেলা সংবাদদাতা, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট ঃ
ক্ষেতলালে ভিজিএফ চাল বিতরণে ওজনে ঘাটতি, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) কর্মসূচির চাল বিতরণে বড় ধরনের অনিয়ম, ওজনে ঘাটতি এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্যানেল চেয়ারম্যান, খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ও গুদাম কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

চাল কম, চাল চুরি—দায় কার?

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় মাহমুদপুর ইউনিয়নের ১ হাজার ৫১২ জন সুবিধাভোগীর জন্য খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করা হয় ৫০ কেজি ওজনের ৩০২ বস্তা চাল। কিন্তু বিতরণের সময় দেখা যায়, প্রতিটি বস্তায় ৭ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত চাল কম রয়েছে। একাধিক বস্তা ওজন করে ৪০-৪২ কেজির মধ্যে পাওয়া যায়।

দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার উপজেলা কোঅর্ডিনেটর আনন্দ কুমার জানান, তিনি ঘটনাস্থলে চালের ওজন করে এই ঘাটতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

ভিজিএফ চাল বিতরণে স্বজনপ্রীতি, কালোবাজারির ছায়া

চাল বিতরণে আরও অভিযোগ উঠেছে—একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে ভিজিএফ কার্ড প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় অনেককে দেখা গেছে একাধিক কার্ড হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল উত্তোলন করতে। এমনকি, কিছু অসাধু ব্যক্তি শিশুদের দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে কার্ডের চাল উত্তোলন করে পরে তা পরিষদের বাইরে কালোবাজারে বিক্রি করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল রহমানসহ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, প্যানেল চেয়ারম্যান ও সদস্যদের যোগসাজশে এসব কার্ড কৌশলে কিনে নিচ্ছেন কিছু চক্র।

খাদ্য গুদামেই গলদ? ঘুষ প্রস্তাবের অভিযোগও উঠেছে

এছাড়াও জানা গেছে, চালের ইনভয়েস অনুযায়ী সঠিক ওজন দেওয়ার কথা থাকলেও খাদ্য গুদামে চাল বুঝিয়ে নেওয়ার সময়ই চাল কম ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের। অভিযুক্ত উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ুন আহমেদ ও তার সহকারী সোহেল রানার বিরুদ্ধেও ওজনে ঘাটতির অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি সংবাদ সংগ্রহে গেলে সহকারী সোহেল রানা তাকে রিপোর্ট বন্ধ করতে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেন, যার ভিডিওচিত্র প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ কী বলছে?

প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন মন্ডল বলেন, “আমাদের কাজ ছিল কার্ড যাচাই করা ও বিতরণে সহায়তা করা। চালের ওজন মাপা বা ঘাটতির বিষয়টি প্রশাসনের দায়িত্ব।”

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ুন আহমেদ বলেন, “এই চাল পাকিস্তান থেকে এলসি করা হয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুদামে চাল বুঝিয়ে দিয়েছে ইনভয়েস অনুযায়ী। গুদামে স্কেল না থাকায় ওজন যাচাই সম্ভব হয়নি। বিতরণের দায়িত্ব চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসারের।”

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্মৃতি কনস্ট্রাকশন-এর স্বত্বাধিকারী মাহবুবর আলম বলেন, “আমরা গুদামে যথাযথভাবে চাল বুঝিয়ে দিয়েছি। বিতরণের সময় ওজনে ঘাটতির দায় আমাদের নয়।”

একজন ঠিকাদার আব্দুল মালেক বলেন, “কোনো ঠিকাদারই সরকারি খাদ্য পরিবহনের সময় চাল কম দিয়ে থাকে না। গুদামে স্কেল ছাড়া চাল বুঝে নেওয়া চরম দায়িত্বহীনতা।”

প্রশাসনের অবস্থান

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, চালের ঘাটতি পুনরায় পূরণ করার চেষ্টা চলছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আল জিনাত বলেন, “বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। প্রমাণ মিললে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপরে