প্রকাশিত : ৪ জুন, ২০২৫ ০২:৩৩

চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি: বিপাকে শিবগঞ্জের কোরবানির পশু খামারিরা

সোহেল আক্তার মিঠু, শিবগঞ্জ, বগুড়াঃ
চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি: বিপাকে শিবগঞ্জের কোরবানির পশু খামারিরা

বগুড়ার শিবগঞ্জে ঈদুল আযহা সামনে রেখে জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। উপজেলার বুড়িগঞ্জ, মাঝিড়া, রায়নগরসহ বিভিন্ন হাটে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে গরু, ছাগল ও ভেড়া নিয়ে আসা খামারি ও বিক্রেতাদের। তবে হাট জমে উঠলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি, ফলে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন স্থানীয় খামারিরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে শিবগঞ্জ উপজেলায় মোট ৬৮ হাজার ৮০১টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫১ হাজার ৩১৮টি গরু, ১১ হাজার ৮৩৩টি ছাগল, এবং ৫ হাজার ৬৫০টি ভেড়া। চাহিদার তুলনায় পশু উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেছে, যা বিক্রয়মূল্যে প্রভাব ফেলছে।

সোমবার বুড়িগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা যায়, খামারিরা বড় আকৃতির মোটাতাজা ষাঁড় ও গরু নিয়ে হাটে এসেছেন, কিন্তু মধ্যবিত্ত ক্রেতারা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন মাঝারি ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামের গরুর প্রতি। শিবগঞ্জের ময়দানহাট্টা এলাকার খামারি আব্দুর রশিদ এনেছেন দেশি জাতের দুটি বড় ষাঁড়। তিনি বলেন, “চার লাখ টাকা দাম চেয়েছি, সর্বোচ্চ সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। যদি ৩ লাখ ৮০ হাজার পাই, তাহলে দিয়ে দেবো।”

স্থানীয় একাধিক খামারি ও গরু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকায় দেশীয় গরুর দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তাই খামারিরা আশা করেছিলেন ভালো লাভ হবে। কিন্তু গো-খাদ্যের উচ্চমূল্য ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজারের বর্তমান দর তাদের আশানুরূপ নয়।

শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়ালী-উল-ইসলাম বলেন, “এবার খামারিরা প্রত্যাশার তুলনায় বেশি পশু মোটা তাজা করেছেন। যদিও লাভ বেশি নাও হতে পারে, তবে গত বছরের মতো বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে না। ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধ থাকায় দেশীয় গরুর প্রতি চাহিদা কিছুটা বেড়েছে।”

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে গরুর দাম গতবারের তুলনায় বেশি হওয়ায় তারা বেশ কষ্টে কোরবানির জন্য পছন্দসই পশু খুঁজছেন। হাটে দরদাম নিয়ে চলছে টানাপোড়েন, কেউ কেউ আবার আশপাশের হাটগুলো ঘুরে তুলনামূলক দাম যাচাই করে নিচ্ছেন।

চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পশু উৎপাদন এবং হাটে ক্রেতা সংকট — এই দুই মিলিয়ে শিবগঞ্জের খামারিরা এখন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন। পশু বিক্রি না হলে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কাও তাদের মধ্যে বিরাজ করছে। তবে প্রশাসনের নজরদারি, বাজার ব্যবস্থাপনা এবং ক্রেতা সমাগম বাড়লে হয়তো শেষ মুহূর্তে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেতে পারেন খামারিরা।

উপরে