গণমুখী বাজেট দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিড়ি শ্রমিকদের অভিনন্দন

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী ও বাস্তবভিত্তিক আখ্যায়িত করে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন। মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক হারিক হোসেন। এতে বাজেটে বিড়ির শুল্ক না বাড়ানো এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান শ্রমিক নেতারা।
চার দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে বিড়ি শ্রমিকদের চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. বিড়ির ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার।
২. বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর নিম্নস্তরের সিগারেট উৎপাদন বন্ধ।
৩. নূন্যতম মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি।
৪. নকল বিড়ি উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ এবং জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রতিরোধ কমিটি গঠন।
বিড়ি শিল্পের সংকট তুলে ধরেন নেতারা
লিখিত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক হারিক হোসেন বলেন, “বিড়ি শিল্প বাংলাদেশের একটি প্রাচীন শ্রমঘন শিল্প। এটি দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তবে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে এই শিল্প বারবার ক্ষতির মুখে পড়েছে। অতিরিক্ত শুল্কের কারণে অনেক বিড়ি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “সিগারেট ও বিড়ি দুটোই তামাকজাত পণ্য হলেও সিগারেটের উপর মাত্র ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ থাকলেও বিড়ির ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে, যা চরম বৈষম্য।” তিনি দ্রুত এই বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানান।
বহুজাতিক কোম্পানির সমালোচনা
ফেডারেশনের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি বলেন, “বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানি যেমন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (BAT) ও জাপান টোব্যাকো (JTI) দেশের তামাক বাজারের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ দখল করে ফেলেছে। এরা দেশের নিম্নআয়ের মানুষের ফুসফুস পুড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশীয় শ্রমনির্ভর বিড়ি শিল্পকে রক্ষা করতে হলে এই বহুজাতিক কোম্পানির নিম্নস্তরের সিগারেট উৎপাদন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”
মজুরি বৃদ্ধি ও নকল বিড়ি বন্ধের দাবি
সংগঠনের নেতারা বলেন, বিড়ি শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে অমানবিক পরিশ্রম করলেও তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। তাই অবিলম্বে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করে বিড়ি শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করার দাবি জানান তারা।
এছাড়াও দেশে নকল বিড়ি উৎপাদন ও বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে এবং আসল বিড়ি উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায় নকল বিড়ি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, লুৎফর রহমান, আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল গফুর, আবুল হাসনাত লাভলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।