চলনবিলে আগাম বন্যা,তলিয়ে গেছে কৃষকের পাঁকা ধান

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও টানা বৃষ্টিতে শস্য ভান্ডার খ্যাত দেশের উত্তর অঞ্চলের বৃহত্তর চলনবিলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে কৃষকের পাঁকা ধান। এতে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, উল্লাপাড় ও শাাহজাদপুর, নাটোর জেলার সিংড়া, গুরুদাসপুর, পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর উপজেলার শত শত বিঘা জমির কাঁচা-পাকা ধান পানিতে
তলিয়ে গেছে। চলনবিলের কৃষকরা সরিষা আবাদ শেষে ব্রি-২৯ জাতের ওই ধান আবাদ করে থাকেন।যে কারণে ধান পাঁকতেও একটু দেরি হয়। ফসলী মাঠের কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমর পানিতে নেমে কৃষকদের ধান কাটতে দেখা গেছে। আর এ সব ধান পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে নৌকা, কলার ভেলা ও পলেথিন দিয়ে তৈরী বিশেষ নৌকা। এ দিকে শ্রমিক সংকটের কারণে পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক। আবার কোন কোন এলাকার ডুবে যাওয়া ধান কোনো ভাবেই কাটা সম্ভব হচ্ছে
না। এতে করে শত শত কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।তাড়াশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, হঠাৎ বন্যার পানিতে
চলনবিলাঞ্চলের নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে সরিষার জমিতে নাবিজাতের ব্রি-২৯ ধান তলিয়ে গেছে। তবে এ সব অঞ্চলের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ বছর স্বাভাবিক সময়ের ১০ দিন আগে মৌসুমি বায়ু দেশে প্রবেশ করেছে। আর এতে বৃষ্টিপাতের পরিমান বৃদ্ধি পায়। তাড়াশ উপজেলার হামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম বলেন, আমরা সরিষা আবাদ শেষ করে ব্রি-২৯ জাতের ধান লাগাই। এই কারণে ধান পাকতে সময় লাগে। এ বছর টানা বৃষ্টি আর আগাম বন্যার পানি আশায় বিলের নিম্ন অঞ্চলের জমি ডুবে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন এবছর ১০ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম, ৫ বিঘা জমির ধান কেটেছি। বাকিগুলো এখনো কাটতে
পারিনি। ধানের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বিঘা প্রতি ৭-৮ হাজার টাকা মজুরী
দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ফলন ভাল হলেও এবার লোকসান গুনতে হবে সবার।নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিয়াস, গুরুদাসপুর উপজেলার রুহাই, পিপলা, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ সগুনা, উল্লাপাড়া উপজেলার রহিমপুর ও শাহজাদপুর এলাকার পোতাজিয়া পয়েন্টে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে নেয়া হচ্ছে বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকা। কিন্তু পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেশিন
ডুবে যাওয়ায় তা দিয়েও আর ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না।সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের বিয়াস গ্রামের কৃষক আল-মাহমুদ বলেন, অনেকে শ্রমিক না পেয়ে ধানের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অর্ধেক ভাগ দিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। বিলশা গ্রামের আরেক কৃষক আরিফুল ইসলাম জানান, এবার
ধান ভালো ফলন হওয়ায় বাম্পার ফসলের আশা করেছিলাম। ৫ বিঘা জমিতে লাগানো সব ধান পেঁকে গিয়েছিল। কিন্তু টানা বৃষ্টি পাতের কারণে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় সব ধান গভীর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যা কাটাও সম্ভব হয়নি। সারা বছর কি ভাবে সংসার চলবে চিন্তা করতে পারছি না তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ
বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়ায় নিম্নাঞ্চলের নাবি জাতের বেশ কিছু ক্ষেতের ধান তলিয়ে গেছে।