প্রকাশিত : ১২ জুন, ২০২৫ ২১:২৪

বিদায়ী মে মাসে ৫৯৭ সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত, ১১৯৬ জন আহত: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিদায়ী মে মাসে ৫৯৭ সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত, ১১৯৬ জন আহত: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

বিদায়ী মে মাসে দেশে ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত এবং ১১৯৬ জন আহত হওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি, রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত এবং ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, সড়ক, রেল এবং নৌপথ মিলিয়ে মোট ৬৫২টি দুর্ঘটনায় ৬৫৮ জন নিহত এবং ১২১০ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ২৩৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৬ জন নিহত এবং ২০১ জন আহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৯.০২ শতাংশ, নিহতের ৪১.৬৯ শতাংশ এবং আহতের ১৬.৮০ শতাংশ।

মে মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এখানে ১৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত এবং ২৭১ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে, যেখানে ৩০টি দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত এবং ৪৪ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের তথ্য অনুযায়ী,

এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক এবং অনলাইন সংবাদপত্রের মাধ্যমে সড়ক, রেল এবং নৌপথের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে।

সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন:

৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৫৪ জন চালক, ১০৩ জন পথচারী, ৬৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯২ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন শিক্ষক, ৮৮ জন নারী, ৫৮ জন শিশু, ৩৭ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৭ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন: ২ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন সেনাবাহিনী সদস্য, ১ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১৪২ জন পরিবহন চালক, ৯৫ জন পথচারী, ৫৯ জন নারী, ৫৪ জন শিশু, ৬৬ জন শিক্ষার্থী, ৩৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫ জন শিক্ষক ও ৭ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৪৫টি যানবাহন জড়িত ছিল।
এখানে দেখা যায়:

২৯.৪১% মোটরসাইকেল,

২২.৫৩% ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি,

১২.৪৮% বাস,

১৪.১৭% ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক,

৬.৬৬% সিএনজিচালিত অটোরিক্সা,

৯.৩১% নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা,

৫.৩৯% কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ:

৪৯.০৭% গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা,

২৪.৯৫% মুখোমুখি সংঘর্ষ,

২০.১০% নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে,

৫.০২% অন্যান্য কারণে,

০.৫০% ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষ।

দুর্ঘটনার স্থান:

৩৩.৫০% জাতীয় মহাসড়কে,

৩২.৮৩% আঞ্চলিক মহাসড়কে,

২৮.১৪% ফিডার রোডে,

৩.৫১% ঢাকা মহানগরীতে,

১.৫০% চট্টগ্রাম মহানগরীতে,

০.৫০% রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ:

সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিক্সার অবাধ চলাচল।

জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকার কারণে রাতের বেলায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো।

টার্নিং চিহ্ন না থাকায় নতুন চালকদের দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া।

মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করা।

উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি এবং পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।

অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং দীর্ঘ সময় ধরে চালনা।

দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ:

মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা আমদানী ও নিবন্ধন বন্ধ করা।

জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে আলোকসজ্জা নিশ্চিত করা।

দক্ষ চালক তৈরি করা এবং যানবাহনের ডিজিটাল ফিটনেস প্রদান করা।

ধীরগতির যান এবং দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।

সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।

মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা করা এবং রোড সাইন স্থাপন করা।

সড়ক পরিবহন আইন ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা।

উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা।

মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।

 

উপরে