প্রকাশিত : ৫ জুন, ২০২৫ ০১:৫৮

রংপুরে কবি আদিল ফকিরের উদ্যোগে গড়ে উঠছে পল্লী যাদুঘর

জালাল উদ্দিন, রংপুর:
রংপুরে কবি আদিল ফকিরের উদ্যোগে গড়ে উঠছে পল্লী যাদুঘর
পল্লী যাদুঘরে সংগ্রহকৃত গ্রাম বাংলার হারিয়া যাওয়া জিনিসপত্র। - ছবি- জালাল উদ্দিন/চাঁদনী বাজার

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মর্ম সংরক্ষণ এবং হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাংলার জীবনের ছোঁয়া ধরে রাখার এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হিসেবে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার নিভৃত পল্লী এনায়েতপুরের ফকিরবাড়িতে গড়ে উঠছে একটি বিশেষ পল্লী যাদুঘর। কবি, লেখক ও সংস্কৃতিমনা আদিল ফকিরের হাত ধরেই রূপ নেওয়া এই যাদুঘরটি মূলত হারিয়ে যাওয়া ৬০ থেকে ৯০ দশকের গ্রামীণ জীবনের নানা ঐতিহ্যবাহী জিনিষপত্রকে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

ট্রেনের আদলে নির্মিত পল্লী যাদুঘরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় পুরানো দিনের ঐতিহ্যবাহী ও ব্যবহারিক জিনিসপত্র সাজানো হয়েছে, যা দর্শনার্থীদের ইতিহাসের এক জীবন্ত চিত্র উপস্থাপন করে। সরেজমিনে দেখা যায়, ফকিরবাড়ির পল্লী যাদুঘরে রয়েছে ৩০ থেকে ৫০ বছর আগের দৈনন্দিন জীবনের বহুল ব্যবহৃত ঢেঁকি, চুলা, হ্যাচাক, হারিকেন, তালপাতার পাখা, একতারা, টাকার সিন্ধুক, কলের গান যন্ত্র, ডুগডুগি, পানের বাটা, কুপি, ভিসিডিআর, গরুরগাড়ি, যাতা, হুকাসসহ প্রায় ১৫৫ প্রকার বিলুপ্ত প্রায় পুরনো জিনিসপত্র। এছাড়াও রয়েছে কয়েক দশকের প্রচলিত মুদ্রা ও ডাক টিকিটের সংগ্রহ।

এই সংগ্রহশালা গ্রামের সমাজজীবন, কৃষিভিত্তিক কাজকর্ম এবং লোকচিত্রের চিত্রায়ন করে নতুন প্রজন্মের সামনে ঐতিহ্যের একটি মূল্যবান দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে।

কবি আদিল ফকির বলেন, “২০০৪ সাল থেকে আমার স্বপ্ন ছিল এমন কিছু একটা করার, যা গ্রামীণ ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করবে। সেই স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় এই পল্লী যাদুঘর গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাবে।”

ফকিরবাড়ির পল্লী যাদুঘরের আশেপাশে রয়েছে পাঠশালা, উন্মুক্ত পাঠাগার, সান বাধানো পুকুর এবং নানান জাতের বৃক্ষরাজি। ভবিষ্যতে এই পরিসরকে আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

যাদুঘর উদ্বোধনের আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুপরিচিত লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ ও অন্যান্য পেশার মানুষ এখানে এসে দর্শন করেছেন এবং তাদের প্রশংসা জানিয়েছেন।

উদ্যোক্তা আদিল ফকির আরও জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার শুরু হতেই ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে কলের গান ও পুরনো জিনিসপত্র পাঠানো হচ্ছে। “অনেকেই ফোন করে জানান তাঁদের পরিবারের প্রয়াত সদস্যদের ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র আমাদের কাছে পাঠাতে চান। এতে আমাদের উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া মেলায়।”

তিনি সবাইকে ঐতিহাসিক এই প্রকল্পের সাফল্যের জন্য সহযোগিতা করার আহ্বান জানান এবং বলেন, “মাটির টান আর অতীতের স্মৃতিকে সামনে রেখে এই যাদুঘরকে আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো গ্রামীণ ঐতিহ্যকে জীবন্ত রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে।”

সুধীজনরা মনে করেন, “গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণে ফকিরবাড়ির পল্লী যাদুঘর একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। এটি মিঠাপুকুর এবং রংপুরকে জাতীয় পর্যায়ে নতুনভাবে চিনিয়ে দেবে।”

উপরে