
সন্ধ্যা হলেই বদলে যায় বগুড়ার শহীদ মিনারের চিত্র! এ দৃশ্য দেখলে যেকোন মানুষের লজ্জায় মাথা নুয়ে আসবে। জুতা পড়ে কেউ বা বাদাম খাচ্ছে আবার কেউ বা হেলান দিয়ে ধূমপান করছে সাথে আবার অনেকে হিন্দি গানের সুরে গিটারের তালে তালে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে আড্ডার আসর বসিয়েছে যেন সারাদিনের ক্লান্তি জুড়ানোর এই একটি স্থানই বগুড়াই অবশিষ্ট রয়েছে। আবার রাত বাড়ার সাথে সাথেই শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ভাসমান যুবকেরা এই শহীদ মিনারেই এসে লুকিয়ে বসায় মাদকের আসর।
এছাড়া বিভিন্ন ঝোপঝাঁড়ে কিশোর পথশিশুরা পলিথিনে জুতার আঠা (ডান্ডি) টেনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে সেখানেই। ওদের ঘুম ভাঙ্গে পরদিন সকালে। ভাবছেন তবে কি শহীদ মিনার এখন বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। না, তা একদম না! এ চিত্র লজ্জার, এ চিত্র বগুড়াবাসীর দুঃখের! এখন এই চিত্র প্রতিদিন দেখা যায় বগুড়া শহীদ খোকন পার্কে অবস্থিত জেলার মূল শহীদ মিনারের পাদদেশে। বগুড়া পৌরসভার তত্বাবধানে পরিচালিত শহীদ খোকন পার্কে অবস্থিত শহীদ মিনার একমাত্র স্থান যেখানে লাখো মানুষ ভাষা শহীদদের প্রতি বিভিন্ন দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে আসে। কিন্তু একদিনের শ্রদ্ধা জানানোর পর সারাবছর সেই শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি অসম্মান জানানোর যে চিত্র তা এখন ভাবাচ্ছে বগুড়া সকল অঙ্গণের মানুষকে।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী যে কঠোর আন্দোলন ও ত্যাগের মাধ্যমে আজ আমরা নিজেদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে পারছি, যারা নিজেদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের দিয়েছিল এই বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার তাদের শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত শহীদ মিনারেই আজ আমাদের প্রজন্মরা নুন্যতম শ্রদ্ধা জানাতেই ভুলে যাচ্ছে। অশ্রদ্ধা ও ভাষা শহীদদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের সেই চিত্র যেন এখন প্রতিদিনই দেখা যায় প্রাণের এই শহীদ মিনারে। মূল শহীদ মিনারের পাশে বড় বড় অক্ষরে জুতা পরে বেদীতে উঠবেন না লিখা থাকলেও সকলে যেন চোখ থাকতেই আজ অন্ধ। নিচে সিঁড়ি থেকে শুরু করে উপরে মূল বেদী পর্যন্ত ছোট বড় সকলে যেন শহীদ মিনারের নুন্যতম মর্যাদা ভুলে নিজেদের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চালায় তাদের বিভিন্ন রসাত্মক আড্ডা।
খোকন পার্কে প্রতিদিন হাঁটতে আসা আব্দুল মোমিন নামে এক ব্যক্তির সাথে কথা বললে তিনি অত্যন্ত দু:খ ভারাক্রান্ত মনে জানান সমাজের বিভিন্ন সচেতন মানুষ বেদীতে জুতা পরে বসা এবং শহীদ মিনারে বসে ধুমপান করার বিষয়ে নানা সময়ে প্রতিবাদ করলেও উল্টো অপমান হতে হয় সমাজের উঠতি উশৃঙ্খল যুব সমাজের কাছে সেজন্য এখন বিষয়টি যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে শহীদ মিনারের আশেপাশে থাকা সাধারণ মানুষগুলোর কাছে। বগুড়া শহীদ মিনারের নিত্যদিনের এই চিত্র বিষয়ে জেলার সন্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ সিদ্দিকীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, বর্তমান প্রজন্ম ভাষা দিবসের তাৎপর্য এবং শহীদ মিনারের গুরুত্ব দিন দিন ভুলতে বসেছে।
অপরাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবে আজ আমাদের যুব সমাজের অনেকে ক্ষমতা দেখাতে পারে কিন্তু ভাষা শহীদদের প্রতি নুন্যতম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা যে উচিত তা তারা ভুলতে বসেছে। বগুড়ার শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষার্থে অতিদ্রুত তিনি প্রশাসনের সুষ্ঠু হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং সেই সাথে সমাজের সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান। এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম বদিউজ্জামান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পবিত্র স্থান শহীদ মিনার যারা কলুষিত করছে এবং বিবেকহীনতার পরিচয় দিচ্ছে সে বিষয়ে বগুড়া সদর থানা পুলিশের পক্ষে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে শহীদ মিনারের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু হবে এবং ভাষা শহীদদের প্রতি অসম্মান জানানোর জন্য বখাটেদের উশৃঙ্খলার উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করা হবে মর্মে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।