
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নগরবাসীর অসহনীয় দুর্ভোগ যানজট ও জনজটমুক্ত রাখতেই সরকার পাতাল রেল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে।
বুধবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা শহরে পাতাল রেল (সাবওয়ে) নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শীর্ষক সেমিনারে এ কথা জানান তিনি। মন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে পাতাল রেল নির্মাণের জন্য স্পেনের টিপসার নেতৃত্বে যৌথভাবে জাপানের পেডিকো, বিসিএল অ্যাসোসিয়েটস, কেএসসি এবং বেটসকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঢাকায় পাতাল রেল নেটওয়ার্কের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১টি রুটের এলাইনমেন্ট প্রস্তাব করে। যার মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চারটি রুট প্রাথমিক ডিজাইন কাজের অন্তর্ভুক্ত।
এই চারটি রুট হলো- ঝিলমিল থেকে টঙ্গী পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার, শাহকবির মাজার রোড থেকে সদরঘাট পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার, কেরানীগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ কিলোমিটার।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আশা করেন, এ প্রকল্পটি নির্মাণের ফলে ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ লাখ কর্মজীবী মানুষের মধ্যে ৪০ লাখ মানুষ মাটির নিচে স্থানান্তর হবে এবং মাটির উপরিভাগ যানজট ও জনজটমুক্ত হবে।
দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুতে রেলওয়ে এবং সড়কপথের স্ল্যাব বসানোর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত মূল সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি শতকরা ৯২.৫০ ভাগ, নদীশাসন কাজ শতকরা ৮০ ভাগ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৮৪.৫০ ভাগ।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শেষে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
সেতুমন্ত্রী জানান, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিং কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে টিউবটির ২০০ মিটার রোড স্ল্যাব নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় টিউবটির ৭০০ মিটার বোরিং কাজ শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত টানেলের নির্মাণকাজের অগ্রগতি শতকরা ৬৫ ভাগ।
এছাড়া সেতু বিভাগের অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো হলো- মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটির এবং ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প।
ঢাকা শহরে পাতাল রেল (সাবওয়ে) নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শীর্ষক সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সেতু সচিব মো. বেলায়েত হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে বলেন, ৭ মার্চ ও ১৭ মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কি বিএনপি দেখতে পায় না? বিএনপি নেতারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনে জনগণের সম্পৃক্ততা দেখতে পান না, তারা নিজেরা জনবিচ্ছিন্ন বলেই জনসম্পৃক্ততা দেখতে পান না।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, এদেশের সাধারণ মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমেই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন অর্জন যেমন বিএনপি দেখতে পায় না তেমনি দেখতে পায় না নেতিবাচক রাজনীতির কারণে তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। সাম্প্রতিক পৌরসভা নির্বাচন এবং বিভিন্ন উপনির্বাচনে তাই প্রমাণিত হয়েছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রাষ্ট্রের অর্জন বিএনপি সহ্য করতে পারে না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার অব্যাহত উন্নয়ন যাত্রা এখন বিএনপির গাত্রদাহ।
বিএনপি নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের দর্শনে বিশ্বাসী বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধ তৈরি করেছে শেখ হাসিনা সরকার। অন্যদিকে বিএনপি তৈরি করেছিল অবিশ্বাসের কৃত্রিম দেয়াল।
যারা গঙ্গার পানি বণ্টনের বিষয়টি ভারত সফরকালে বেমালুম ভুলে যায় তারা আজ তিস্তার পানি বণ্টনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকারের সমালোচনার কৌশল এখন তাদের ভোতা অস্ত্র হয়ে গেছে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন