
কাহালু পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মোঃ ইখলাস হোসেনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেছেন পৌরসভার একদল লাইসেন্সধারী ঠিকাদার। ২৬ মে, সোমবার দুপুরে কাহালু প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ আনেন এবং দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, মোঃ ইখলাস হোসেন গত ১২ বছর ধরে কাহালু পৌরসভায় কর্মরত রয়েছেন, যা পৌর চাকরি বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দীর্ঘ সময় একই পদে বহাল থেকে তিনি একটি ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু আওয়ামীপন্থী ঠিকাদারকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রধান অভিযোগসমূহ:
১. এডিপি প্রকল্পে দুর্নীতি: বিগত ১২ বছরে এডিপি প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে টেন্ডার ছাড়াই ব্যয় করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
বৃহৎ পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়ম: পাবনা-বগুড়া প্রকল্পের অধীনে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় নিন্মমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। এতে জলাধারে ফাটল ও পাইপলাইনে লিকেজ দেখা দেয়।
৩. স্যানিটারি প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী: বিভিন্ন ওয়ার্ডে টয়লেট নির্মাণে নিম্নমানের রিং ও স্ল্যাব ব্যবহার করে অর্থ লোপাটের অভিযোগ ওঠে।
৪. কোভিড-১৯ প্রকল্পেও অর্থ আত্মসাৎ: একটি আরসিসি ঢালাই প্রকল্পে মাত্র ৪০% কাজ করে ৮০% অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে, যেখানে প্রকৌশলী নিজেই কাজের অংশীদার ছিলেন বলে অভিযোগ।
৫. ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ: বর্তমান চলমান প্রকল্পে টেন্ডার পাইয়ে দিতে প্রকৌশলী ৫৫ লক্ষ টাকার মধ্যে ৩৫ লক্ষ টাকা মম ইন হোটেলে ঘুষ হিসেবে আদায় করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
৬. লাইসেন্স নবায়নে বাধা: প্রকৌশলী তার অপছন্দের ঠিকাদারদের লাইসেন্স নবায়নে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে পৌরসভার কয়েকজন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঠিকাদার জড়িত। একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক সরাসরি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দ বা তাদের আত্মীয়-স্বজন বলে পরিচিত।
বিশেষ অভিযোগ:
মোঃ ইখলাস হোসেন কাহালু পৌরসভার সাবেক মেয়র ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে তার অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে তার নামে-বেনামে অর্জিত সম্পদেরও হদিস মিলবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঠিকাদাররা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। অন্যথায় তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।