প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০২১ ০৯:৫৬

‘জাপান বাংলাদেশকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে’

অনলাইন ডেস্ক
‘জাপান বাংলাদেশকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে’

এশিয়ার দেশ হিসেবে মানবতার ভিত্তিতে জাপান বাংলাদেশকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের জাপানি বন্ধু তাকাশি হাওয়াকাওয়ার পুত্র ওসামু হাওয়াকাওয়া।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ যে ‘সোনার বাংলা’র কথা বলেছেন, তা গড়ার উদ্দেশ্যে এশিয়ার দেশ হিসেবে মানবতার ভিত্তিতে জাপান বাংলাদেশকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালার নবম দিনে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় যুক্ত হন ওসামু।

এ সময় তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১৪ মার্চে, যখন আমার বাবা জাপান সরকারের বিশেষ মৈত্রী দূত হিসেবে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। আমিও বাবার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলে ছিলাম। সেই সময় সারা বাংলাদেশ ছিল শিকল ভাঙার সুখ ও স্বাধীনতা অর্জনের আনন্দে পরিপূর্ণ। চার দিনের অবস্থানকালে সেটি প্রত্যক্ষ করে বাবাও অত্যন্ত অভিভূত ও আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের আর কিছু দিনের মধ্যেই ভীষণ ব্যস্ততা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু তার কার্যালয়ে আমাদের আমন্ত্রণ করলেন। বাবার সঙ্গে দেখা হলে তিনি বাবাকে আন্তরিকভাবে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।’

ওসামু আরও বলেন, আমরা দেখলাম, দেশের স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গীকৃত জীবনের অর্ধেক কারাগারে কাটাতে বাধ্য হলেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন সদা উজ্জ্বল ও উষ্ণ মনের অধিকারী। বাবা (তাকাশি) বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অভিনন্দন জানানোর পর তারা বৈঠকে বসেন এবং রাষ্ট্র গঠনে উৎসাহী দুই নেতার মধ্যে আন্তরিক আলোচনা যেন শেষ হতে চায়নি।

‘তাদের মনের আবেগ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়’ মন্তব্য করে ওসামু বলেন, এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বললেন যে, বাংলাদেশকে পূর্ব ও পশ্চিম দুই ভাগে বিভক্তকারী যমুনা নদীতে সেতু নির্মাণের কাজ যেন জাপানের হাতে সম্পন্ন হয়। তিনি আগ্রহের সঙ্গে আরও বলেন, সেই সেতু হবে বাংলাদেশ ও জাপানের বন্ধুত্বের প্রতীক।

তিনি বলেন, এই সফরকালে আমরা বাংলাদেশ ঘুরে দেখার সুযোগ পাই। সদ্য শেষ হওয়া যুদ্ধের ক্ষত রয়ে গিয়েছিল সব জায়গাতেই। কল্পনাতীত ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে বাবা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিলেন।

ওসামু বলেন, দেশে ফেরার পর আমার বাবা যমুনা সেতু নির্মাণে সহায়তা প্রদান ও জাপানের দেয়া অন্যান্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রয়াস নেন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে জাপানের সহযোগিতায় অনেক বড় বড় সেতুর নির্মাণসহ অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে জাপান সফরের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দল হাওয়াকাওয়া পরিবারের আদি নিবাস ওয়াকাইয়ামাতেও যান। এ সময় তিনি একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, এই ছবিটি সেই সময় তোলা হয়েছিল।

বাবা বঙ্গবন্ধুকে কৃষি ও মৎস্যজীবীদের গ্রামে নিয়ে গিয়ে জাপানিদের সাধারণ ও অনাড়ম্বর জীবন দেখাতে চেয়েছিলেন। ওয়াকাইয়ামা সফরকালে বঙ্গবন্ধু স্কুলের শিশুদের সঙ্গেও দেখা করেন। এক সময় তিনি রাস্তার ধারে হলুদ রঙের ফল দেখে কৌতূহলী হলেন। বাবা তার সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে কমলা লেবু চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন।

ওসামু বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে প্রত্যাবর্তনের পর বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মাথা বাবাকে উপহার দিয়েছিলেন (ছবি দেখান রয়েল বেঙ্গলের)। বাবার মৃত্যুর পরেও এটি বহুদিন আমাদের বাসায় সংরক্ষিত ছিল। টোকিওতে বাংলাদেশের নতুন দূতাবাস ভবন উদ্বোধনের পর ২০১৭ সালে আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে বাঘের মাথাটি দূতাবাসে প্রদান করেছি।

দু’দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্মৃতি চিহ্ন এই বাঘের মাথা চিরস্থায়ী বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মানুষের মনে গেঁথে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে জাপানে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। বাবা জীবিত থাকলে দু’দেশের মধ্যে মৈত্রী বিনিময়ের একজন ভিত্তি স্থাপনকারী হিসেবে এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করতেন।’

ওসামু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবরূপ লাভ করবে এবং আপনার দেশ বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অধিকতর অবদান রাখবে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে