জেল দেওয়ার বিধান আছে, প্রয়োগ নেই

পণ্য বা সেবা বিক্রিতে অনিয়ম করলে জড়িতদের জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ আইন-২০০৯-এ জরিমানার পাশাপাশি জেল দেওয়ার বিধান হয়েছে। কিন্তু আইন কার্যকরের পর এ পর্যন্ত কাউকে কারাগারে পাঠানোর নজির নেই। ফলে সুযোগ পেলেই একটি চক্র মানুষ ঠকাচ্ছে। এরা পেঁয়াজ, চাল-ডাল, ভোজ্য তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে নাজেহাল করছে। সরবরাহ ও উৎপাদন পর্যাপ্ত থাকার পরও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। ক্রেতার পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা। সরকারের একাধিক সংস্থা ওই চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করার পরও তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ২০০৯ সালে প্রণীত এ সংক্রান্ত আইনের প্রায় সব ধারায় অর্থদণ্ডের সঙ্গে কারাদণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় অধিদপ্তরের মনিটরিং টিমের সদস্যরা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারাদণ্ড দিতে পারে না। আইনে থাকলেও তাদের সেই ক্ষমতা প্রয়োগের এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। কারাদণ্ড একজন ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসক দিতে পারেন। যারা বাজার মনিটরিংয়ে যান, তাদের সর্বোচ্চ পদবি উপপরিচালক। তবে আমাদের আইন অনুযায়ী কোনো ম্যাজিস্ট্রেট যদি কাউকে শাস্তির আওতায় আনেন, তবে তিনি কারাদণ্ড দিতে পারেন।
এদিকে ভোক্তা আইন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এর ৩৭ ধারায় পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। ৩৮ ধারায় মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। ৪২ ধারায় খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্য মেশালে তিন বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান দেওয়া আছে। পাশাপাশি ৫২ ধারায় সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন করার মতো কাজ করলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। একই বিধান আইনের ৫৩ ধারায়ও বলা আছে। কিন্তু অধিদপ্তরের সাজার তালিকায় অসাধুদের কারাদণ্ড দেওয়ার কোনো নজির দেখা যায়নি।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৭৭৪টি বাজার তদারকি করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এসব বাজারের এক লাখ ৪৮ হাজার ২টি প্রতিষ্ঠানকে নানা অনিয়মে ৭২ কোটি ৯৫ হাজার ৬৪২ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ৫০ হাজার ৫৫ জন ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে ৬ হাজার ৯৫৮টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার ৮ টাকা জরিমানা করা হয়। এ দুই পর্যায়ে মোট জরিমানা আদায় হয়েছে ৭৬ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৫০ টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮৬৮ জন ভোক্তার অভিযোগ প্রমাণ হয়। এতে জরিমানার ২৫ শতাংশ ১ কোটি ১৯ লাখ ৫৮০২ টাকা ভোক্তাকে দেওয়ার পর সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ৭৫ কোটি ৬৩ লাখ ৮৮ হাজার ১৪৮ টাকা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে চাই দেশে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠুক। পণ্য কিনতে এসে ভোক্তা ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতারিত হোক, এটা চাই না। ঠিক একইভাবে ব্যবসায়ীরাও যাতে প্রতারণার শিকার না হন, সেটাও আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু দেশের চিত্র পুরোটাই উলটা। একশ্রেণির অসাধু বিক্রেতা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তা ঠকাচ্ছে। সমিতির পক্ষ থেকে আমরা বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোয় চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তেমন কাজ হচ্ছে না।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন