রাজারবাগ পীরের সম্পদের তথ্য চেয়ে রিটের শুনানি কার্যতালিকায়

ভুয়া মামলার সিন্ডিকেট খুঁজতে রাজারবাগ পীর সাহেব ও তার লালিত চক্রের (মুরিদদের) দেশব্যাপী দায়ের করা গায়েবি মামলার বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনের ওপর আজ শুনানি হতে পারে।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ রিট শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে রিট আবেদনটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রয়েছে বলে সকালে নিশ্চিত করেছেন রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর ও তার ম্যানেজারের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের তথ্য) চেয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন দাখিল করা হয়। এতে পীর ও তার ম্যানেজারের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে তদন্ত করে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ভুক্তভোগী সাত বছরের শিশু, ভুক্তভোগী নারী, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, মাদরাসার শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ পীরের মুরিদদের দায়েরকৃত মামলায় হয়রানির শিকার আট ব্যক্তির পক্ষে এ রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
রিট আবেদনে রাজারবাগ পীর ও তার চক্রের সদস্যদের দেশব্যাপী ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, মানহানিকর মামলা দায়েরের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। একই সঙ্গে রিট আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে করা মামলার বিষয়ে একটি তদন্ত চাওয়া হয়।
রিট আবেদনে দরবার শরিফের পীর ও তার মুরিদদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এ নিয়ে রুল জারি করা হলে সেই রুল শুনানি চলাকালে অন্তর্বর্তীকালীন তিনটি নির্দেশনারও আর্জি জানানো হয় রিটে।
তিন নির্দেশনার মধ্যে প্রথমত, দরবারের মালিকানায় সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ, লভ্যাংশ ও ব্যংক হিসাবের তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা। দ্বিতীয়ত, রিটে উল্লিখিত সব মামলার অনুসন্ধান এবং বাদী ও তার মামলা দায়েরের উদ্দেশ্য সম্পর্কিত তথ্য তদন্তপূর্বক আদালতে দাখিল করা এবং তৃতীয়ত, রিট আবেদনকারী ও তাদের পরিবারের সকল সদস্যের নিরাপত্তা প্রদান।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও রাজারবাগ পীরসহ ২০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট দায়েরের পর ওইদিন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে ল রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে (এলআরএফ) এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা বলেন, তাদের জায়গা-জমি দখলের জন্যই একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। যেসব মামলায় তাদের স্বজনদের কেউ কেউ কয়েক বছর ধরে কারাভোগ করছেন।
এসময় রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর জেলে বন্দি রয়েছেন অনেক নিরীহ মানুষ। এদের কেউ কেউ মামলায় জামিন পেয়ে যখন কারামুক্তি পাবেন, ঠিক তখনই তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হচ্ছে আরেকটি নতুন মামলা। আমরা এসব মামলার বিষয়ে তদন্ত চেয়েছি।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ৪৯ মামলার আসামি ভুক্তভোগী একরামুল আহসান কাঞ্চনও উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, সম্পত্তি হস্তান্তর না করায় রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীদের সঙ্গে শত্রুতার সৃষ্টি হয় রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের। এ শত্রুতার জেরেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় তার বিরুদ্ধে ৪৯টি হয়রানিমূলক মামলা করা হয়। এসব মামলার পেছনে দরবার শরিফের পীর ও তার উল্লিখিত অনুসারীদের অশুভ স্বার্থ হাসিলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় সিআইডি।
পুলিশের এ বিশেষ তদন্ত সংস্থার করা তদন্ত প্রতিবেদনটি এরইমধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ২৩টি জিআর (থানায়) এবং ২৬টি সিআর (আদালত) মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি জিআর এবং ২০টি সিআর মামলা হতে আদালত কর্তৃক খালাসপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। বর্তমানে ১৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে আটটি জিআর এবং ছয়টি সিআর মামলা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন