প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:১৫

সোহেল রানাকে ফেরাতে সাড়া নেই দিল্লির

তিন দফায় ঢাকার চিঠি
অনলাইন ডেস্ক
সোহেল রানাকে ফেরাতে সাড়া নেই দিল্লির

পুলিশ পরিদর্শক (সাময়িক বরখাস্ত) সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তিন দফা চিঠি দিয়েও দিল্লির সাড়া মেলেনি।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মাধ্যমে গ্রাহকের ১১০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ভারতের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) চিঠিগুলো দেওয়া হয়। সর্বশেষ চিঠি দেওয়া হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর।

কিন্তু কোনো ধরনের সাড়া না পেয়ে এখন স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার চিন্তা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার মতামতের ভিত্তিতে সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখা থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের এনসিবিকে প্রথম চিঠি পাঠানো হয়। ৭ সেপ্টেম্বর আরেক দফায় অতিরিক্ত তথ্য সংযুক্ত করে ‘রিমাইন্ডার’ হিসেবে চিঠি পাঠানো হয়। তাতেও সাড়া না মেলায় তৃতীয় দফায় চিঠি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

কোনো উদ্যোগেই সোহেল রানাকে ফেরাতে সাড়া পাওয়া যায়নি। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, চিঠিতে সোহেল রানার মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। তাকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। এটি দেশের বাইরের কোনো আসামিকে ফিরিয়ে আনার প্রথম প্রক্রিয়া। এতে সাড়া না পাওয়া গেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগের সময়ে এনসিবি কোনো তথ্য জানালে তাও মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, আমরা ভারতের এনসিবি থেকে এখনো কোনো সাড়া পাইনি। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ফরোয়ার্ড করে দিচ্ছি। এখন মন্ত্রণালয় বিষয়টির সব দিক দেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

তিনি বলেন, মূলত আসামি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ হয় এনসিবি টু এনসিবি। সরকার থেকে সরকার যোগাযোগ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমরা একটা পার্ট (অংশ) হয়ে কাজ করি। এটা একটি সমন্বিত কাজ। কিন্তু ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে মূল কাজটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই করে থাকে। ইতোমধ্যে গুলশান থেকে মামলার যাবতীয় তথ্য এনসিবিকে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র আরও জানিয়েছে, যে কোনো আসামিকে বাইরে থেকে আনতে গেলে অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রথমেই যেই দেশ থেকে আনা হবে, তাদের বলতে হয় যে আসামি সেখানেই আছেন। তারা জানালে আসামির বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করা হয়। তখন ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই দেশগুলো বলে কূটনৈতিক চ্যানেলে যেতে।

কারণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অ্যাম্বাসির মাধ্যমেই প্রসেসটি শুরু হয়। যদি বন্দি বিনিময় চুক্তি থাকে তাহলে চুক্তির আওতায় নিয়ে আসা যায়। যেটা ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের আছে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে মিউচুয়াল লিগ্যাল এগ্রিমেন্ট করতে হয়। তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা ইনিশিয়েট (শুরু) করে। এনসিবি এ সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরি করে। এনসিবি থেকে যোগাযোগ করা হয় যেই স্টেশনে (থানা) মামলা সেখানে।

সংশ্লিষ্ট স্টেশন নথিগুলো প্রস্তুত করে এনসিবিতে পাঠায়। এনসিবি সেগুলো পাঠালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেগুলোর সঙ্গে চুক্তির আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো যুক্ত করে নথিগুলো পাঠায়। যেই দেশে পাঠানো হয়, সেখানে আবার আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। কারণ এখানে আদালতেরও নিজস্ব কিছু বিষয় থাকে। আদালত যদি মনে করে আসামিকে দেবে না, তাহলে আনা যায় না।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ ও এনটিএমসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হলে সেটি আইন শাখায় পাঠানো হবে। আইন শাখার মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে গত ১৭ আগস্ট ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে অর্থ আÍসাতের মামলা করেন ভুক্তভোগী গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। আসামি করা হয় ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, আমানউল্লাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ ও সোহেল রানাকে।

এ মামলায় এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন প্রধান তিন আসামি সোনিয়া, মাসুকুর ও প্রতিষ্ঠানের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ। গত ৫ সেপ্টেম্বর বনানী থানার পরিদর্শক শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় হওয়া প্রতারণা ও অর্থ আÍসাতের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে আবেদন করেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান। তার আগেই তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান।

গত ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্দায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েন পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা। পরদিন ভারতীয় গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিএসএফের হাতে আটক সোহেল রানা গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন তিনি। কর্মরত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বনানী থানায়। সোহেল রানার বোন ও ভগ্নিপতি ই-অরেঞ্জ পরিচালনা করতেন।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে