‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ধর্মকে পুঁজি করে সহিংসতায় লিপ্ত’

‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, এলাকার জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ থাকার পরও শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে। চিহ্নিত কিছু উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সুকৌশলে ধর্মকে পুঁজি করে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ধর্মান্ধ, ধর্ম ব্যবসায়ী, উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি বলেই আজ রামু-নাসিরনগর থেকে কুমিল্লা কিংবা রংপুরের ঘটনা ঘটছে।’
শনিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গণ-অনশন, গণ-অবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সম্প্রতি শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিন্দ চন্দ্র ভৌমিক, মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, সহ-সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ কুমার নাথ প্রমুখ।
একই সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি সংগঠন শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলে প্রায় দুই ঘণ্টা এলাকাটিতে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
এসময় বক্তারা বলেন, দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। সবাই মিলেমিশে যখন বসবাস করছে, ঠিক সেই সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক এ রাষ্ট্রকে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা চলছে। দেশের অগ্রযাত্রাকে থামানোর চেষ্টা হচ্ছে।
সমাবেশে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপতৎপরতার অংশ হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সম্প্রীতি বিনষ্টে সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে যা অত্যন্ত ঘৃণ্য অপরাধ। এসব হামলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার ওপর আঘাত করা হচ্ছে। এ ধরনের অশুভ তৎপরতা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে দমন করতে হবে।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলা এখনো ঘটে যাচ্ছে, এটা বন্ধ হয়নি। অথচ আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। যে দেশ হবে সবার, যেখানে সবার অধিকার থাকবে। যুদ্ধ করেছি অসাম্প্রদায়িক বাংলার জন্য, ধর্মান্ধদের আধিপত্য করতে দেব না। আমি মানুষ, কাউকে আক্রান্ত হতে দেখলে এগিয়ে যাবো। সবাই আক্রান্তদের পাশে এগিয়ে আসুন।
নিন্দ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে কুমিল্লা, রংপুর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগেও বিগত দিনে এমন হামলা হয়েছে। রামু থেকে নাসিরনগরের ঘটনা আমরা ভুলে যাইনি। এসব ঘটনা সাজানো, পরিকল্পিত। আগে দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। অতীতের ঘটনায় সরকার কিছু ব্যবস্থা নিলেও দিষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। অথচ সরকার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে সংখ্যালঘু কমিশনের কথা বলেছিল, যার বাস্তবায়ন আজও হয়নি। বঙ্গবন্ধুর সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে, যার কারলে হামলা-মামলা বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমরা সাম্য, মানবিক, ন্যায়বিচার চাই। ৭২’র সংবিধান চাই, অর্পিত সম্পত্তির অধিকার চাই। আমাদের সংবিধানের চার মূলনীতিতে বিশ্বাসী হতে হবে। এই চার মূলনীতির বাইরে যারা তাদের রাজনীতির অধিকার নেই। যারা বিশ্বাস করে না, তাদের সঙ্গে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সমাবেশ শেষে পানি খাইয়ে অনশনরতদের অনশন ভাঙান অতিথিরা। পরে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড় হয়ে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন