শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে বাসেত মজুমদারের চিরবিদায়

দ্বিতীয় জানাজা শেষে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নিজের চিরচেনা অঙ্গন ও কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিরবিদায় নিলেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল বাসেত মজুমদার।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ২টায় সুপ্রিম কোর্টের পাশে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রাঙ্গণে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মরদেহ কুমিল্লার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে আব্দুল বাসেত মজুমদারের কফিনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি, ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ), বৃহত্তর ময়মনসিংহ আইনজীবী সমিতি, বৃহত্তর ফরিদপুর আইনজীবী সমিতি, সৈয়দ রেজাউর রহমান অ্যাসোসিয়েটসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জানাজায় উপস্থিত ছিলেন- প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, রেল যোগাযোগ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী মাহাবুব আলী, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
জানাজার আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল আব্দুল বাসেত মজুমদারের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। জানাজায় বাসেত মজুমদারের ছেলে অ্যাডভোকেট সাইদ আহমেদ রাজা তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
এর আগে বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুল বাসেত মজুমদার মারা যান। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
প্রবীণ এই আইনজীবীর প্রথম জানাজা বেলা ১১টায় বনানী কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এরপরের জানাজা বাদ জোহর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় জাতীয় ঈদগা ময়দানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এখন মরদেহ নিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন স্বজনরা। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় শানিচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর আব্দুল বাসেত মজুমদারকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সোমবার (২৫ অক্টোবর) তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
বাসেত মজুমদার একাধিকবার বার কাউন্সিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে।
দুস্থ আইনজীবীদের জন্য নিজের নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেন তিনি। দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে এই ফান্ড থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সাবেক সভাপতি বাসেত মজুমদার নবগঠিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে দায়িত্বপালন করেন।
আইন পেশায় ৫৬ বছরে ধরে নিয়োজিত ‘গরিবের আইনজীবী’ খ্যাত আব্দুল বাসেতের জন্ম ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি। কুমিল্লার লাকসাম (লালমাই) উপজেলার শানিচোঁ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম আব্দুল আজিজ মজুমদার, মা জোলেখা বিবি।
স্থানীয় হরিচর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক (এসএসসি) এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ (এইচএসসি) ও বিএ পাস করেন বাসেত মজুমদার। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৬৬ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবীর বড় ছেলে গোলাম মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের ব্যবসা করেন। ছোট ছেলে সাঈদ আহমেদ রাজা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।
দুই মেয়ের মধ্যে ফাতেমা আক্তার লুনা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। সর্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীতে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন তিনি। ছোট মেয়ে খাদিজা আক্তার ঝুমা উত্তরা মেডিকেল কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন