একাব্বর হোসেন ছিলেন নিষ্ঠাবান, সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিষ্ঠাবান রাজনীতিকের প্রয়োজনীয়তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি। টাঙ্গাইল-৭ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মরহুম একাব্বর হোসেনকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য গড়ে তুলছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো আদর্শিক, সৎ ও নিষ্ঠাবান যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে একাব্বরও ছিলেন। আমাদের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়া ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য যাদের তৈরি করছিলাম, তাদের একজনকে হারালাম। এই মৃত্যু দেশ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। দুর্ভাগ্য তাকে হারালাম।
সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেনের মৃত্যুতে বুধবার (১৭ নভেম্বর) সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বর্তমান সংসদের এই সদস্যের মৃত্যুতে সংসদের বৈঠকের শুরুতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে সর্বসম্মতক্রমে তা গ্রহণ করা হয়। এর আগে সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন।
চলমান সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে সংসদের বৈঠকে শোক প্রস্তাব আনার পর তা নিয়ে আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। শোক প্রস্তাবের ওইদিন সংসদের অন্য কার্যক্রম স্থগিত রেখে বৈঠক মুলতবি করা হয়।
একাব্বর হোসেনকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের নিষ্ঠাবান রাজনীতিক কতটা প্রয়োজন তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি। একাব্বর হোসেন ছিলেন এমন একজন নিষ্ঠাবান, সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ। একাব্বর থাকলে এদেশের রাজনীতিতে অনেক অবদান রাখতে পারতো। কারণ তার সততা ও একনিষ্ঠতা ও দেশপ্রেম। একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে যা সব থেকে বেশি প্রয়োজন। নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি যেমন ছিল।
তিনি বলেন, আমাদের আবারও সেই শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিদিনই তার চিকিৎসার খবর নিচ্ছিলাম। গতকাল খবর পেলাম তার আবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। লাইফসাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। তখনই আমার সন্দেহ হলো আর বোধহয় ফিরে আসবে না। সেই ঘটনাটাই ঘটলো।
আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার আমরা সংসদ শুরু করলাম- তখন সত্যি একটি আশ্বস্ত নিয়েই ছিলাম। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা সংসদের ২০ জন সদস্যকে হারিয়েছি। বলতে গেলে প্রতিবারই সংসদ শুরু করতে হতো শোক প্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু শোক প্রস্তাব এবার নেওয়া হলেও কোনো এমপির মৃত্যুর জন্য আলোচনা করার দরকার হয়নি বলে আশ্বস্ত ছিলাম। স্বস্তি নিয়ে শুরু করলাম ঠিকই কিন্তু ভয়াবহ আঘাতটা এলো।
তিনি বলেন, একটি সংসদে এতজন মানুষের মৃত্যু। সত্যিই যেন অস্বাভাবিক ঘটনা আামাদের জীবনে ঘটে গেলো। যারা দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে- তারাই যেন একে একে চলে যাচ্ছে। একাব্বর হোসেন সক্রিয় একজন ছাত্রলীগকর্মী ছিলেন। এমন একটি সময় যে ছাত্রলীগ করতো তখন সামরিক জান্তা ক্ষমতায় ছিল। সেই সময় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করাটা কঠিন ছিল। ছাত্ররাজনীতি করাটাও কঠিন ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাব্বর সবসময় সক্রিয় ছিলেন। তিনি আদর্শের প্রতীক ও নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। ছিলেন ভালো সংগঠক। দেশ ও জনগণকে অনেক কিছু দিতে পারতেন। ১৯৮১ সালের পর থেকে অনেক ঝড়ঝাপটা পার হয়ে আমাদের চলতে হয়েছে। পদে পদে বাধা। যেখানে সভা করতে গেছি বাধা। মিটিংয়ে বোমা হামলা থেকে শুরু করে মঞ্চ পোড়ানো। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে চলতে হয়েছে। একাব্বরদের মতো আমাদের নিবেদিতকর্মী যারা ছিল তারা সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সমাবেশ যোগ দিয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রাম গড়েছে। গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল। কোনো সমাবেশের ডাক দিলেই ছুটে আসতো। আন্দোলনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে একাগ্রচিত্তে কাজ করেছে। তার অবদানটি কখনো ভোলার নয়।
তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল। আত্মার সম্পর্ক ছিল যার কারণে সহজভাবে নির্বাচনে জিতে আসতো। নির্বাচনে নমিনেশন পাওয়ার পর সে কারও থেকে চাঁদা তোলা, টাকা নেওয়া কোনো কিছুই সে করেনি। মির্জাপুরের ওই এলাকায় আমাদের অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। সেখানে উন্নয়ন কাজে বাধা দেওয়া বা কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে সে ছিল না বরং প্রতিটি কাজ যাতে সহজভাবে হয় সেই প্রচেষ্টা তার মধ্যে দেখেছি। টাঙ্গাইলের উন্নয়নে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। প্রতিটি স্থায়ী কমিটিতে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। সড়কের সভাপতি হিসেবে উন্নয়নের ভূমিকা রেখেছে।
চলতি সংসদের মারা গেলেন যারা
বক্তব্যের শুরুতে চলতি সংসদের যেসব এমপি মারা গেছেন তার তালিকা তুলে ধরেন সংসদ নেতা। চলতি সংসদের যারা মারা গেছেন তারা হলেন- কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের এমপি রুশেমা বেগম (মহিলা আসন-৩৪), সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনের মঈনউদ্দীন খান বাদল, গাইবান্ধা-৩ আসনের মো. ইউনুস আলী সরকার, বাগেরহাট-৪ আসনের মোজাম্মেল হোসেন, বগুড়া-১ আসনের আবদুল মান্নান, যশোর-৬ আসনের ইসমাত আরা সাদেক, পাবনা-৪ আসনের শামসুর রহমান শরীফ, ঢাকা-৫ আসনের হাবিবুর রহমান মোল্লা, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ঢাকা-১৮ আসনের সাহারা খাতুন, নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম, সিলেট-৩ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক, কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু, কুমিল্লা-৭ আসনের অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের হাসিবুর রহমান স্বপন, জাপার সংরক্ষিত আসনের এমপি মাসুদা এম রশীদ ও টাঙ্গাইল-৭ আসনের একাব্বর হোসেন।
বাংলাদেশে খাদ্যের হাহাকার নেই
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ থেকে বাংলাদেশকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রেখে দেশের মানুষের জীবনযাত্রী সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। সারাবিশ্ব এটা মনে করে; আমাদের বলে। বিশ্বের অবস্থা দেখলেও উপলব্ধি করতে পারি। অনেক উন্নত দেশেও খাদ্যের অভাব। দুর্ভিক্ষ অবস্থা। বাজারে জিনিস পাওয়া যায় না। সুপার মার্কেটগুলো খালি। লন্ডনে গিয়ে শুনতে হচ্ছে সুপার মার্কেটে অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। সাপ্লাই নেই। খাবার জিনিস পর্যন্ত পাওয়া যায় না। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গ্রামে পর্যন্ত খাদ্যের হাহাকারটা নেই।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন