ফুলবাড়ীকে জেলা ঘোষণা: স্বাধীনতার ৫৭ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি দাবী

স্বাধীনতার ৫৭ বছর পার হলেও, আজও ফুলবাড়ী উপজেলা জেলা হওয়ার দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষ হয়নি। দিনাজপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ ৬টি উপজেলা—ফুলবাড়ী, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর, এবং পার্বতীপুর—বৈষম্যহীন উন্নয়নের জন্য ফুলবাড়ীকে জেলা ঘোষণার দাবিতে দীর্ঘকাল ধরেই আন্দোলন করে আসছে এলাকার মানুষ।
তারা মনে করেন, ফুলবাড়ীকে জেলা ঘোষণা করা হলে, এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হবে এবং তাদের বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধার লাভ হবে। এর ফলে, এখানকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে যাবে।
এলাকার ৬টি উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এবং সংগ্রামের পর, ১৯৭৮ সালের ৯ মে ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ফুলবাড়ীকে মহকুমায় উন্নীত করার চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার স্মারক নম্বর ছিল ১৭/১৭(২)পোপ/৭৯-৬২৮, যা ১৪ জুন ১৯৭৯ তারিখে গেজেট নোটিফিকেশন হিসেবে প্রকাশিত হয়। কিন্তু, পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তার ঘোষণাটি বাস্তবায়ন হয়নি। সেই সময়ের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
ফুলবাড়ীকে জেলা ঘোষণার দাবিতে গঠিত "ফুলবাড়ী জেলা বাস্তবায়ন কমিটি" দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন পৌর মেয়র শাহাজাহান আলী সরকার পুতু। তিনি জানান, "ফুলবাড়ী জেলা বাস্তবায়নের জন্য এলাকাবাসী আজও সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি জেলা বাস্তবায়ন করা খুবই প্রয়োজন।"
ফুলবাড়ী, বিরামপুর, হাকিমপুর, পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ, এবং ঘোড়াঘাট—এই ছয়টি উপজেলার সমন্বয়ে ফুলবাড়ী জেলা ঘোষণার দাবী উঠেছে। ৬টি উপজেলার ভৌগলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও শিল্পকলকারখানার সংযোগ ইত্যাদি নানা দিক বিবেচনা করে ফুলবাড়ী জেলা ঘোষণার দাবি জোরালো হয়েছে। ফুলবাড়ীতে রয়েছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসা কেন্দ্র।
এলাকা বাসী জানাচ্ছেন, "যতটা সুবিধা দিনাজপুর শহরে পাওয়া যায়, তার থেকে অনেক দূরে থাকার কারণে আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ঘোড়াঘাট থেকে দিনাজপুরে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন দূর্ভোগ পোহাতে হয়। সেই সাথে চিকিৎসা, শিক্ষা এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়।"
ফুলবাড়ী অঞ্চলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা যেমন—বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি, ৫২৫ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাইক্রোওয়েভ স্টেশন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, হেলিপ্যাড, এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্প কলকারখানা অবস্থিত। সড়ক ও রেল যোগাযোগের জন্য ফুলবাড়ী একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়া সত্ত্বেও জেলা না হওয়ায় এখানকার মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় সেবা সঠিকভাবে পাচ্ছেন না।
এলাকার রাজনৈতিক মহল এবং সচেতন নাগরিক সমাজ আশা করছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ফুলবাড়ীকে জেলা করার বিষয়ে পুনরায় গুরুত্ব দেয়া হবে এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘোষণাটি বাস্তবায়িত হবে।
ফুলবাড়ী জেলা বাস্তবায়ন হলে, এখানকার জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন হবে, এবং জাতীয় উন্নয়নে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, এই আন্দোলন সফল হলে, তাদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হবে।