প্রকাশিত : ৫ জুলাই, ২০২৫ ২০:৪৩

নৌপথেই সাশ্রয়ী পণ্য পরিবহন: যমুনা নদীতে বাড়ছে নৌ-বাণিজ্য

এনামুল হক, শেরপুর, বগুড়াঃ
নৌপথেই সাশ্রয়ী পণ্য পরিবহন: যমুনা নদীতে বাড়ছে নৌ-বাণিজ্য

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী যমুনা আবারও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পরিণত হচ্ছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলমান এই নদীপথ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে অর্থনৈতিক সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও টাঙ্গাইল অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য যমুনা কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, দেশের প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার নদীপথের মধ্যে সারা বছর নৌযান চলাচলের উপযোগী পথ রয়েছে মাত্র ৫,৯৬৮ কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে এই পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৩,৮৬৫ কিলোমিটারে। এই সীমিত ব্যবস্থার মধ্যেও যমুনা নদী গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

যমুনা নদীপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন সড়কপথের তুলনায় অধিক সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। স্থানীয় মাঝি রাকিবুল হাসান বলেন, “এক লিটার ডিজেলে আমাদের নৌকা ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে, যেখানে ট্রাকে একই দূরত্বে জ্বালানি খরচ দ্বিগুণ বা তারও বেশি।” তিনি আরও জানান, নদীপথে যানজট কিংবা রাস্তার ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি না থাকায় এটি ব্যবসায়ীদের জন্য অধিক লাভজনক।

কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও যমুনা একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ধান, গম, পেঁয়াজ, সবজির মতো কৃষিপণ্য নদীপথে একসাথে ৪০-৫০ টন পর্যন্ত পরিবহন করা সম্ভব, যা উৎপাদনকারীদের লাভ বাড়ায় এবং ভোক্তাদের কাছে ন্যায্যমূল্যে পণ্য পৌঁছাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

তবে শুষ্ক মৌসুমে যমুনার নাব্যতা কমে যাওয়ায় নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা উত্তরণের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নৌযান মালিকরা নিয়মিত ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়েছেন।

নৌপরিবহন বিশ্লেষক শহীদুল ইসলাম বলেন, “যমুনার নৌপথকে সারা বছর সচল রাখতে হলে নিয়মিত ড্রেজিং অপরিহার্য। একই সঙ্গে আধুনিক নৌবন্দর ও ঘাট নির্মাণ, এবং একটি পূর্ণাঙ্গ নৌ-লজিস্টিক জোন গড়ে তোলা গেলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে একটি বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে যমুনা নদী হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম সাশ্রয়ী ও টেকসই বাণিজ্যপথ।

উপরে