প্রকাশিত : ১৩ জুলাই, ২০২৫ ০১:০১

সোহাগ হত্যা মামলা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে এজাহার বদলের অভিযোগ, অস্বীকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

চাঁদনী ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্টঃ
সোহাগ হত্যা মামলা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে এজাহার বদলের অভিযোগ, অস্বীকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
লালচাঁদ ওরফে সোহাগ। ছবি- সংগৃহীত

ঢাকার কোতোয়ালি থানায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যা মামলার এজাহার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, মামলার এজাহার দায়েরের সময় পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে মূল অভিযুক্তদের নাম বাদ দিয়েছে এবং এজাহারে যুক্ত করেছে এমন কয়েকজনের নাম, যারা ঘটনাটির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নন। তবে এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

নিহতের ভাগ্নি বিথি সময় সংবাদকে জানান, ঘটনার দিন রাতে তারা থানায় গেলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে একটি অভিযোগপত্র দেখায় এবং সংশোধনের সুযোগ দেয়। তবে শেষপর্যন্ত যেটিকে এজাহার হিসেবে গ্রাহ্য করা হয়, সেটিতে মূল অভিযুক্তদের নাম বাদ দেওয়া হয় এবং সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের নাম যুক্ত করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মায়ের (বাদী) স্বাক্ষর আদায় করা হয়েছে দ্বিতীয় একটি কাগজে, যা আগে দেখানো হয়নি।

স্বজনদের বক্তব্য: ‘মূল আসামিদের বাদ, নির্দোষদের জড়ানো’

বিথি বলেন, "আমার মা যখন এজাহারে সই করেন, তখন তিনি ভাবেন, আগের কপিটিতেই স্বাক্ষর দিচ্ছেন, কিন্তু পরে দেখা যায়, সেটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এতে ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর আসামির—কাইউম মোল্লা, রাকেশ ও রহিম—নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বরং এমন একজনের নাম এসেছে, যার নাম আগের কপিতে ছিল না। মামলাটি হালকা করতে এবং মূল আসামিদের রক্ষা করতে পরিকল্পিতভাবে এটি করা হয়েছে।"

বিথির অভিযোগ অনুযায়ী, তারা পুলিশের আচরণে চাপের মুখে ছিলেন। তার মাকে থানার একটি কক্ষে একা রেখে স্বাক্ষর নেয়া হয়। "আমরা কেউ তখন ভিতরে ছিলাম না," বলেন বিথি।

নিহত সোহাগের বোন ও মামলার বাদী মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, "আমার ভাই মারা যাওয়ায় তখন আমার হিতাহিত জ্ঞান ছিল না। কাগজটা আমি মেয়েকে দেখিয়েছি। ও পড়ে দেখে বলেছে, সব ঠিক আছে। কিন্তু পরে দেখা গেল, যে কপিতে সই করেছি, সেটি ভিন্ন।"

পুলিশের প্রতিক্রিয়া: "এজাহার পরিবর্তনের সুযোগ নেই"

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “এজাহার বাদী দিয়েছে, আমরা নয়। বাদীর দেওয়া অভিযোগপত্রই মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। তারা শিক্ষিত, নিজেরা পড়ে বুঝে সই করেছে। এখন বাইরে গিয়ে অন্যকথা বলছে।”

তিনি আরও বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।”

তদন্ত নিয়ে র‍্যাব ও পুলিশের অবস্থান

শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার জসীম উদ্দিন জানান, প্রাথমিক তদন্তে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পেছনে চাঁদাবাজি নয়, বরং ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের বিষয়টি উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, “একসময় একসঙ্গে ভাঙারির ব্যবসা করলেও লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।”

এর আগে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মহাপরিচালক এ. কে. এম শহিদুর রহমান জানান, র‍্যাব সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্ত করছে এবং মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হুঁশিয়ারি

সোহাগ হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে ডিবির বিশেষ দল কাজ করছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে জনসমক্ষে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

উপরে