প্রকাশিত : ২৯ জুলাই, ২০২৫ ০২:১৩

রাণীনগরে শ্রেণিকক্ষ সংকটে নাকাল পালশা কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়

উপজেলা সংবাদদাতা, রাণীনগর, নওগাঁঃ
রাণীনগরে শ্রেণিকক্ষ সংকটে নাকাল পালশা কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পালশা কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটে নাকাল হয়ে পড়েছে। চাহিদা অনুসারে বিদ্যালয়টিতে কক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়ে একই কক্ষে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। এতে করে সুশৃঙ্খল, সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে শত শত শিক্ষার্থী। আর পাঠদান কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের।

জানা গেছে, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালে পালশা কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগী। ওই এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়ায় ১২ থেকে ১৫টি গ্রামের শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ পালশা কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যালয়টি শ্রেণিকক্ষ সংকটে নাকাল হয়ে পড়েছে। শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে একই কক্ষে ১২০-১৩০ জনের উর্দ্ধে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করাতে বাধ্য হচ্ছেন। মেয়েদের কমন রুমের অবস্থা বেহাল। ভেঙ্গে যাওয়া জরাজীর্ণ টিনের কক্ষে প্রচন্ড গরমের মধ্যে মেয়েদের সময় কাটাতে হয়। একটি মাত্র শহীদ মিনারের অবস্থাও বেহাল। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের ও অন্যান্য শিক্ষকদের বসার মতো মানসম্মত কোন কক্ষ না থাকায় প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের একটি কক্ষেই বসতে হচ্ছে এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. খোরশেদ আলম জানান, প্রতিবছরই বিদ্যালয়ের এসএসসি ফলাফল ভালো হলেও শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়ে আসছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৫৬২ জন। আর প্রতিদিন মাত্র ৬টি কক্ষে পাঠগ্রহণ করছে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী। বলা যায়, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। একই সঙ্গে একই কক্ষে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের সামাল দিতে চরমভাবে হিমশিম খেতে হয় প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষককে।

তিনি বলেন, সরকারি নিয়ম মানতে গিয়ে এবং কক্ষের সংকট থাকার কারণে নতুন করে শাখা খোলা যাচ্ছে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী বাড়ির কাছের বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে দূরবর্তি বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয় বলে ঝড়ে যাচ্ছে। প্রাচীর ঘেরা বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও বিগত সময়ে রাজনৈতিক যাতাকলে পড়ে বিদ্যালয়টি একটি আধুনিক মানের ভবন পায়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে পাঠদানে একটি সুন্দর পরিবেশ বিনির্মাণ করা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে বিদ্যালয়টি। যদি বিদ্যালয়ের একতলা ভবনের উপর নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয় তাহলে শ্রেণিকক্ষ সংকট যেমন দূর হবে, তেমনিভাবে নিয়মানুসারে একটি কক্ষে নিরিবিলি পরিবেশে পাঠগ্রহণ করতে পারবে শিক্ষার্থী। এতে করে বিদ্যালয়ে পাঠদানের পরিবেশ আরো উন্নত হবে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোছা. সুন্দরী আক্তার, প্রিয়াসহ অনেকেই জানান, একটি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে পাঠগ্রহণ করা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে আসছি। কক্ষ সংকটের কারণে আমাদের একই কক্ষে শতাধিক শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণ করতে হচ্ছে। এতে শ্রেণিকক্ষে পাঠগ্রহণের সময় তেমন একটা মনোযোগী হতে পারেন না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষকদেরও সঠিকভাবে পাঠদান করাতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে বছরের পর বছর এই অঞ্চলের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাই দ্রæত একটি আধুনিক শিক্ষা ভবন বরাদ্দ প্রদান করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন বিদ্যাপিঠটির শিক্ষার্থীরা।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান বলেন, বিদ্যালয়টির শ্রেণিকক্ষ সংকটের কথা প্রধান শিক্ষক জানিয়েছে। বিদ্যালয়ে আধুনিক মানের ভবন নির্মাণের জন্য দ্রæত বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

 

উপরে