
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও, জনবল সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না এলাকাবাসী। আধুনিক ভবন ও সুযোগ-সুবিধা থাকলেও প্রকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থায় চলছে ভেঙে পড়া অবস্থা। মাত্র ২-৩ জন চিকিৎসক দিয়ে দেড় লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
২০২৩ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনও পর্যন্ত নতুন জনবল নিয়োগের অনুমোদন মেলেনি। ফলে পূর্বের ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ৬০০ রোগী সেবা নিতে আসেন, কিন্তু চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২ জন—একজন গাইনী কনসালট্যান্ট ও একজন মেডিকেল অফিসার। জরুরি বিভাগে রাত-দিন পালাক্রমে মাত্র একজন ডাক্তার সেবা দেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩১ শয্যার জন্যও যেখানে প্রয়োজন ৭ জন চিকিৎসক, সেখানে রয়েছে মাত্র ২ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ৫টি পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ যেমন—প্রধান সহকারী, স্টোর কিপার, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, স্বাস্থ্য টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ড বয়, আয়া, বাবুর্চি ও নিরাপত্তাকর্মীর মোট ৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে।
বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্য সহকারীদের দিয়ে চালানো হচ্ছে স্টোর ও হিসাব বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোর কার্যক্রম। অপারেশন থিয়েটার চালাতে হচ্ছে ভাড়া করা অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট দিয়ে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সময়মতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ভিতরের শয্যাগুলো পূর্ণ থাকায় অনেক রোগী মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম ও প্যাথলজি রুমেও ভিড় লেগে আছে।
সোনারপাড়া গ্রামের মঈন উদ্দিন বলেন, “এই অবস্থা দেখে ইমারজেন্সি রোগী নিয়ে আসাই ভুল। সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া যায় না, সবাই শুধু অপেক্ষা করে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান মেহেদী হাসান বলেন, “৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন থাকলেও আমরা ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করছি। এ জনবল কাঠামোও পূর্ণ নয়। বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলো একেবারেই শুন্য। এতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে, আশা করছি দ্রুতই সমাধান হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, অবিলম্বে ঘোড়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পূর্ণ জনবল নিয়োগ ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ না নিলে এলাকার চিকিৎসাসেবা মুখ থুবড়ে পড়বে।