গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় অসময়ে গরুর ভাইরাসজর্নিত মারাত্মক রোগ 'ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ' (এলএসডি)র প্রকোপ বেড়েই চলছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এই রোগের দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় গবাদিপশুর মৃত্যু হারও আশঙ্কা জনকভাবে বাড়ছে। কিন্তু রোগের এমন চরম প্রাদুর্ভাবেও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকদের মাঠ পর্যায়ে অনুপস্থিতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারিরা।
ভাইরাসজনিত এই ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে উচ্চ জ্বর আসে এবং দ্রুত সমস্ত শরীরে গোলাকার গুটি বা ফোস্কা সৃষ্টি হয়। গুটি ফেটে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ক্ষত যায়গায় পোকা দেয়ায় দুর্বল হয়ে পড়ছে গরু, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দ্রুত চিকিৎসার অভাবে অনেক গরুই মারা যাচ্ছে, যা খামারিদের জন্য বিশাল আর্থিক ক্ষতির কারণ।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারিরা অভিযোগ করেছেন, রোগের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ বা দ্রুত চিকিৎসা সেবা মিলছে না। আক্রান্ত পশুর মালিকরা দিশাহারা হয়ে স্থানীয় হাতুড়ে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন। হচ্ছে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত্য। এ প্রসঙ্গে হরিরামপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র খামারি বাবলু মিয়া, মইদুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, হবিবর রহমান, ছাইদার ও মাজু সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, "আমাদের গরু একের পর এক অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, মারাও যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি চিকিৎসকদের কাউকে আমরা এলাকায় দেখিনি।"একই অভিযোগ করেন ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ফতেউল্লা পুর গ্রামের উত্তম কুমার রায় এবং গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা শ্যামলেন্দু মোহন রায় (জীবু বাবু)। তারা জানান, রোগের চিকিৎসা বা পরামর্শের জন্য সরকারি দপ্তরের কোনো কর্মীর তৎপরতা তারা চোখে দেখেননি।
গোবিন্দগ্জ উপজেলা প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন প্রাণীসম্পদ অফিসে‘জনবল কম, তবুও কম জনবল নিয়েই চিকিৎসা কাজ চলছে অব্যহত। তবে, খামারিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তার দপ্তরের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "আমাদের ১৭টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ একটি বিশাল এরিয়া। সেই তুলনায় জনবল খুবই কম, যা দিয়ে একযোগে সব এলাকায় সামাল দেওয়া সত্যি হিমশিম হয়ে যায়।
তারপরেও আমরা আমাদের দিক থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।"
কর্মকর্তা বলেন, "এ রোগের দেশি ও বিদেশি কোম্পানির পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন বাজারে রয়েছে, যা আমরা প্রতি বছর গবাদিপশুকে একটি করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষক ও খামারীরা সময়মত এ রোগের প্রতিসেধক ভ্যাপসিন না দেয়ায় এ রোগের প্রাদূর্ভাব হয়ে থাকে। তিনি আক্রান্ত পশুকে মশারির ভেতর রাখা ও মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।
স্থানীয়দের কঠোর অভিযোগ এবং মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি কর্তৃপক্ষের জনবল সংকটের দাবির বিপরীতে এক ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে। অতি দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ না নিলে গোবিন্দগঞ্জের গো-সম্পদ এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।